বিক্ষিপ্ত অশান্তি,হাতাহাতি, অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দিয়ে রাজ্যে সম্পন্ন হল পঞ্চম দফার ভোট। সোমবার শ্রীরামপুর,ব্যারাকপুর,হুগলি,বনগাঁ,হাওড়া, উলুবেড়িয়া ও আরামবাগ এই সাতটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। বেলা গড়াতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে অশান্তির খবর আসতে থাকে। ব্যারাকপুর, হাওড়া, শ্রীরামপুর, বনগাঁর বিভিন্ন থেকে নানা অভিযোগ সামনে আসে। কোথাও এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে, কোথাও আবার ভোটাদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ সামনে আসে।কোথাও কোথাও আবার দু’পক্ষ হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ে।ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নানা অভিযোগ সামনে আসে।বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংকে বার বার তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। বীজপুরে অর্জুন সিংকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীরা।সেখানে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিজেপি কর্মীদের োপর মারধরের অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থলে অর্জুন যেতেই গো ব্যাক স্লোগান ওঠে। এমনকি গুলি করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থীকে। মহিলা কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন অর্জুন সিং। নির্বাচন কমিশনে সেই বিষয়ে অভিযোগ জানান বিজেপি প্রার্থী। আমডাঙায় ৩টি বুথে এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন অর্জুন সিং। বীজপুর বিধানসভার কাঁচরাপাড়ায় বাবু ব্লক এলাকার তিন নম্বর বুথে বুথ জ্যাম করার অভিযোগ ওঠে ৷ ঘটনাস্থলে ছুটে যান ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং। তাঁকে লক্ষ্য করে 'অর্জুন সিং মুর্দাবাদ' এবং 'গো ব্যাক স্লোগান' ওঠে ৷ এরপরই মেজাজ হারিয়ে গাড়ি থেকে নেমে তৃণমূল কর্মীদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় অর্জুন সিংকে ৷ অর্জুনকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ মহিলা তৃণমূল কর্মীই বিক্ষোভ দেখান।বেলা যত গড়ায় উত্তেজনার ছবি ধরা পড়ে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রেও। সকাল থেকেই ময়দানে নেমে পড়েন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিভিন্ন বুথে ঘুরতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ধনেখালিতে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রর সঙ্গে কার্যত সামনাসামনি বাকযুদ্ধে জড়ান লকেট। এদিন লকেট অসীমা পাত্রর বাড়ির এলাকায় পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে 'গো ব্যাক' স্লোগান তোলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। শুরু হয় বিক্ষোভ। সেই সময় অসীমা পাত্রর উদ্দেশে 'চোর' মন্তব্য করেন লকেট। পালটা লকেটের উদ্দেশে ডাকাত মন্তব্য উড়ে আসে অসীমার দিক থেকে। স্লোগান-পালটা স্লোগানে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা পরিস্থিতি।বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীরা প্রশ্ন তোলে, ২০১৯ সালে এতদিন কেন দেখা যায়নি লকেটকে। আজ আবার ভোটের সময় তাঁর দেখা পাওয়া গিয়েছে। এদিন লকেটকে নিশানা করে অসীমা পাত্র বলেন, 'লকেট চট্টোপাধ্যায় ডাকাত। কোটি কাটার মালিক। তিনটে রিসর্ট কী করে হল?' আবার এক গ্রামবাসীর সঙ্গে সরাসরি বাদানুবাদে জড়াতে দেখা যায় বিজেপি প্রার্থীকে। এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।এদিকে ধনেখালির বিধানসভার দশঘড়া ৮৩ নম্বর বুথেও ছড়ায় উত্তেজনা। সেখানে এজেন্ট হিসেবে বসে থাকা এক ব্যক্তিকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চান লকেট। কিন্তু লকেটের দাবি, ওই ব্যক্তি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি বা উপযুক্ত পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। এরপরেই তাঁকে রীতিমত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বুথ থেকে বের করে দেন লকেট। সেই ঘটনাকে ঘিরেও রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। অন্যদিকে একটি বুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসাতেও জড়াতে দেখা যায় লকেটকে।অন্যদিকে জগৎনগর বোর্ড জুনিয়ার বিদ্যালয়ে ১২৫ নম্বর বুখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ জ্যামের অভিযোগ তোলে বিজেপি। অভিযোগ পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছন লকেট চট্টোপাধ্যায়। সেখানে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় বিজেপি কর্মীদের।
এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনেন শ্রীরামপুরের বাম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। তাঁর অভিযোগ, রবিবার রাত থেকেই দলীয় কর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ আসছে। একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে জানান বাম প্রার্থী। দীপ্সিতার দাি, সকালেও এমন অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। দীপ্সিতার অভিযোগ, কয়েকটি বুথে তাঁদের এজেন্টকে বসতে দেয়নি তৃণমূল । নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি জানান তিনি।সেই সঙ্গে সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের অভিযোগ, 'কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছেন ছাপ্পা ভোট না করালে জিততে পারবেন না, তাই এই ঘটনা। ' অন্যদিকে কল্যাণের অভিযোগ, বিরোধীদের কিছুই নেই, তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছে তারা। অন্যদিকে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হাওড়ার ডোমজুড়ের মুন্সিডাঙা বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিপিএম এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এমনকী, তাঁর চেয়ারও তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বুথে গিয়ে এজেন্টকে বসান শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। সব মিলিয়ে সোমবার রাজ্যের সাতটি লোকসভা কেন্দ্রের ভোট সম্পন্ন হয়েছে বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যে দিয়ে।