সম্পাদকীয় -নাসরিন নাজমা – G Tv { Go Fast Go Together)
সম্পাদকীয়    -নাসরিন নাজমা

সম্পাদকীয় -নাসরিন নাজমা

এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা ,যাচ্ছে আমাদের দেশ ,সমস্ত পৃথিবী।প্রায় দু'বছর যাবৎ অতিমারির সাথে লড়ছি আমরা ,প্রায় ক্লান্ত বিধস্ত ,যদিও লড়াই এখনও জারি।এই দুর্যোগে কতজন হারিয়েছে তার অতি আপনারজনকে ,কতজন এই বন্দিজীবনে হারিয়েছে জীবনের আসল ছন্দ ,জীবনের ভারসাম্য।আবার এই কঠিন সময়ই আমাদের চিনিয়েছে মুখোশের আড়ালে মুখ।যে আত্মীয় -বন্ধুরা হয়তো রোজকার আড্ডার সঙ্গী ছিল অথবা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তারাই রোগের লক্ষণ হয়েছে এমনটা জেনেই ত্যাগ করেছে সব সংশ্রব।সংক্রমন এড়াতে শারীরিকভাবে পাশে থাকা অসম্ভব হলেও মানসিকভাবে পাশে থাকতে তো কোনো বাধা ছিলনা।অথচ অনেক ক্ষেত্রেই এই ভরসার স্বরটুকুও পাননি অনেকে।অভিমানে ,কষ্টে একটু একটু করে গুমরেছে পাঁজরের ভেতর

 

দীর্ঘ লকডাউন ,অর্থনৈতিক মন্দায় কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ।পরিসংখ্যান বলছে শুধুমাত্র আমাদের দেশেই সেই সংখ্যাটা প্রায় ১৩ কোটি।ভারতের মত দেশে যেখানে বেশিরভাগ শ্রমিকরাই সংগঠিত কোনো ছাতার তলায় নেই সেখানে নতুন করে বেকার হয়ে পড়া মানুষের আসল সংখ্যা নিশ্চয় ১৩ কোটির চেয়ে অনেক অনেক বেশি।ইউএন রিপোর্ট বলছে ২০২২ সালের মধ্যে গোটা বিশ্ব জুড়ে এই সংখ্যাটা ২০০ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে।

 

আমাদের মত দেশ ,যেখানে আর্থিক বৈষম্য শুধু প্রকট তাই নয় ,মাত্র % মানুষের হাতে দেশের ৭৩% সম্পদ সেখানে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ,অনাহারে ধুঁকতে থাকা মানুষের সংখ্যা কোনদিনই কম ছিলনা।এ দেশে ১৮৯. মিলিয়ন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১৪% অনাহারে ভুগছে।খিদের সূচকে আমাদের অবস্থান ১০৭ নম্বরে।প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি মানুষ ঘুমোতে যায় অভুক্ত অবস্থায় আর প্রতিদিন গড়ে ৭০০০মানুষ মরে যায় শুধুমাত্র খিদেরই কারনে।এখন করোনার জের এই আর্থিক মন্দার পরিস্থিতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে  বেড়েছে অনাহার ,অপুষ্টি ,খাবারের ভাবে মৃত্যুর সংখ্যা।

 

শুধু এদেশেই নয় ,চিত্রটা আরও বহুদূর প্রসারী।কঙ্গো, সোমালিয়া সহ অনেক দেশেই অনাহার ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।বিশ্ব ব্যাংকের মতে এই প্যানডেমিকের ফলে গোটা বিশ্বে আরও প্রায় ৭১ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে চলে যাবে ,আরও অতিরিক্ত ১৩০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগবে।

 

তো গেল মহামারী ,আর খিদের কথা যার  কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল ,কিছুটা আমাদের হাতে ছিলনা।কিন্তু তার বাইরে যে প্রতিকূলতা আমরা নিজেরা তৈরি করছি ,যা একেবারেই কাম্য নয় তাই বা এড়িয়ে যাই কেমন করে। তথাকথিত সভ্য মানুষদের কিছু কর্মকান্ড ,যুদ্ধ ,ক্ষমতার প্রদর্শন আর শক্তিধর শক্তির দুর্বলকে অধিকার করে নেবার অভিপ্রায় রোজই রক্ত ঝরাচ্ছে।গুলি,বারুদ ,বোমারু বিমানের অবিরাম চক্কর পৃথিবীর এক অংশের আকাশকে করে তুলেছে কালো ,অন্ধকারাছন্ন ,ভীতিময়।সিরিয়া ,প্যালেস্টাইন ,ইরাক ,আফগানিস্তান জুড়ে কান পাতলেই কান্নার আওয়াজ ,স্বজন হারানোর আর্তনাদ যা কোনোভাবেই অভিপ্রেত ছিলনা ,যা এড়ানো যেত যদি কিছু মানুষ ,কিছু শক্তি সংবরণ করতে পারতো তাদের লকলকে লোভকে।

 

এই মুহূর্তে সব আর্তনাদ ,সব বর্বরতার যেন মুখ হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান।প্রায় ২০ বছর সামরিক যুদ্ধ এবং বকলমে শাসন ছেড়ে মার্কিন সেনা ফিরে গেছে নিজ দেশে আর আবারও বছর কুড়ি পরে দেশের অধিকার নিয়েছে তালেবানরা।মেয়েদের পড়াশোনা ,চাকরি করা এসব তো বন্ধ হয়েছেই ,এমনকি ফতোয়া দেওয়া হয়েছে মেয়েদের বাইরে বেরোনো নিয়েও।রক্তের সম্পর্কিত পুরুষ অথবা স্বামীর সঙ্গে ছাড়া কোনো মেয়ে বাইরে বেরোতে পারবে না এই হচ্ছে নিদান।শোনা যাচ্ছে যেকোনো সময় যে কাউকে হত্যা করছে তালিবানরা।মিডিয়ার চোখে আমরা দেখেছি শুধুমাত্র প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে কেমন করে সবকিছু ফেলে রেখে দেশ ছাড়তে চাইছেন আফগানরা।

 

ঋতুর হিসেবে এখন শরৎ আকাশে সাদা মেঘের দামাল উল্লাস আর এখানে ওখানে কাশের মেলা ,ভোরের বাতাসে শিউলির গন্ধ আমাদের মনে পুজো পুজো ভাবনাটাকে চাগাড় দিচ্ছে।দানবদের অত্যাচারে যখন দেবলোক জর্জরিত হয়েছিল ,দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ,তখন

দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে নিঃশেষ করেছিলেন ,দশ হাতে রক্ষা করেছিলেন দেবকূল।

আবারও মা আসছেন বছর ঘুরে।শরতের এই স্নিগ্ধ সময় ,মায়ের আগমনে পৃথিবীর এই দুর্যোগ কেটে যাক,থেমে যাক সব হানাহানি ,রক্তপাত

শারদ শুভেচ্ছা সবার জীবনে বয়ে আনুক এক শুভ দিনের সূচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »
Call Now Button