ইতিহাস থেকে যানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর ঘটনা । অর্ধবঙ্গেস্বরী নাটোরের বিখ্যাত দানশিলা রমনী রানি ভবানী আজিমগঞ্জের বড়নগরে বসবাস শুরু করেন । উদ্দেশ্য ছিলো এই বড়নগরকে বাংলার বারাণসী করে তুলবেন ।
রানি ভবানীর একমাত্র কন্যা তারাসুন্দরী । অপূর্ব সৌন্দর্য্যের অধিকারিনী তারা সুন্দরী অল্প বয়সে বিধবা হন । সেই কারণে রানির অবর্তমানে তার বিশাল সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য রামকৃষ্ণ রায় নামে একজনকে দত্তকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন । কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস, রামকৃষ্ণ রায় হয়ে উঠলেন সংসার বিমূখ - উদাসীন ও ভবঘুরে ।
তিনি দিনরাত্রি কালি সাধনায় মগ্ন থাকেন । রানি ভবানী এই ঘটনা জানতে পেরে রামকৃষ্ণ রায়কে সংসার মনোযোগী করে তোলার জন্য গোপনে লোকমারফত ওই কালিমূর্তি গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে দেয় । এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রামকৃষ্ণের উত্তর সাধক ভোলানাথ গঙ্গাবৃক্ষ থেকে ওই কালিমূর্তি অতীব কষ্টে উদ্ধার করে বড়নগরের বিপরীত গঙ্গার পারে অবস্থিত সমৃদ্ধ জনপদ দেবীপুরের মধ্যস্থলে মন্দিরসহ প্রতিষ্ঠা করেন ।
দেবীপুর ছিলো তখন সমৃদ্ধ জনপদ । বহু দেবালয়, বড়ো বড়ো আখড়া ও বহু উচ্চবর্ণের মানুষ ও মহন্তদের বাসস্থান ।
বহুবার অনেক যুবক এই মাত্তৃমূর্তি কে নিয়ে অন্য স্থানে প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিন্তু মায়ের ইচ্ছাতেই নিজের জায়গায় থেকে গিয়েছে ।
১৯৯৫ সালের ১৬ ই মে এক দুর্যোগপূর্ণ রাতে কতিপয় দুষ্কৃতীর একটি দল সত্য সত্যই এই সিদ্ধেশ্বরী মাকে চুরি করে নিয়ে যায় । এই তস্করদের উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধেশ্বরী মূর্তিকে বিরাট টাকার অঙ্কে বিদেশে পাচার করে দেওয়ার । কিন্তু মায়ের কি অলৌকিক মহিমা ! পরদিনই সাগরদীঘি থানার হরিহর গ্রামে এই সিদ্ধেশ্বরী মা ধরা পড়ল । ধরা পড়ল দুষ্কৃতীদের কয়েকজন । তখন মায়ের দাম স্থির হয়ে গিয়েছে প্রায় চার লক্ষ টাকা ।
এরপর দীর্ঘদিন মা সিদ্ধেশ্বরী সাগরদীঘি থানাতেই পূজিত হচ্ছিলেন । কিন্তু এই সিদ্ধেশ্বরী মায়ের অনেক দাবিদার জুটে যায়, তারপর বহু মামলা মোকদ্দমার পর গত ২৬ সে আগস্ট ২০০৪ সালে মা সিদ্ধেশ্বরী আবার তার স্থানে দেবীপুর এসেছেন পুরোনো মন্দিরে ।
বর্তমানে নিরাপত্তার অভাবজনিত কারণে মাতৃমূর্তি দেবীপুর হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শ্রী অমিয় সিংহ রায়ের বাড়ির রামসীতা মন্দিরে পূজিত হচ্ছিল । এলাকাবাসীরা একটি সুন্দর সুরক্ষিত মন্দির প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন । অমিয়বাবুর সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে নিজের বাড়িতেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন ।