প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনন্দ মেলা ও বাৎসরিক উৎসব

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনন্দ মেলা ও বাৎসরিক উৎসব

Reported By অভিজিৎ হাজরা

উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অধীন সিরাজবাটি চক্রের অন্তর্গত মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবিকা ও গ্ৰামবাসিদের সক্রিয় সহযোগিতায় এবং অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল বিদ্যালয়ের বাৎসরিক উৎসব ও আনন্দ মেলা। এই উপলক্ষে ছিল ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিদ্যালয়ের শ্রেণীগত উল্লেখযোগ্য স্থানাধিকারীদের সম্মাননা প্রদান ।        আনন্দ মেলা উৎসবে বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবিকারা তাদের নিজেদের হাতে তৈরি বিভিন্ন খাবারের স্টল দেন এবং তৈরি খাবার বিক্রি করেন। ছাত্র -ছাত্রীরা তাদের নিজেদের হাতে তৈরি কুহেলী কোলে – কুহেলী ফাস্টফুড,সৌমদীপ কোলে – চিকেন পাকোড়া, অন্বেষা কোলে – ভেজ পকোড়া ও বেগুনী, অঙ্কুর কোলে – ভেজ পকোড়া ও পাঁপড় ভাজা, আদিত্য পন্ডিত – ঘুগনি ও এগরোল,সায়েকা খাতুন – ঘুগনি, চালের আটার রুটি, চিকেন কষা,বাদাম ভাজা,মনোজিৎ বনু – ভেজিটেবল চপ,আসিফা খাতুন – বেলেড পকোড়া,আনিসা খাতুন – পাঁপড় ভাজা,সেখ ইসানুর – সুজির রসগোল্লা,মাসবা খাতুন – ক্ষুদ্র পাঁপোড়ের দোকান,সেখ রামিম – পাঁপড় ও ঘুগনি,সেখ পারভেজ আব্বাস – ঘুগনি ও পাঁপড়,সাকিল আহমেদ – সাকিলের স্পেশাল ঘুগনি, আর্য্য ও প্রতিক হাজরা – একবার খেয়ে দেখো বারবার খাবে, সুজন কোলে – ঘুগনি ও পাঁপড় ভাজা,মিন হাজরা – স্পেশাল ঘুগনি, স্নেহময় বাগ – ফাস্টফুড স্টোর, বর্ষা ঘরুই – চানা,সেখ ইযরান – ঘুগনি ও গাজরের হালুয়া,শিবম ঘোষ – খারাপ ঘুগনি শিবমের ও কেক, অঙ্কিতা পালুই – ঘুগনি,আত্রিকা কোলে – জয়গুরু এগরোল,বিরাজ দাস – পিঠে পুলি খাদ্যদ্রব্য গুলি প্রদর্শন ও বিক্রি করে। এই উৎসবে দেখা গেল একজন কৃষক ও কৃষিকাজ বন্ধ রেখে নিজের হাতে তৈরি খাদ্যদ্রব্য আনন্দ মেলা উৎসবে নিয়ে এসে ছাত্র -ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবকদের পাশাপাশি বিক্রি করছেন। কোন কোন ছাত্র -ছাত্রী বলেন, তাদের তৈরি খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে তার লাভের টাকা দিয়ে ভাই – বোনের জন্য খাতা – পেন কিনবো।কেহ কেহ বলেন,মা অসুস্থ – মায়ের জন্য ঔষধ ও ফল কিনবো।কেহ কেহ বলেন, এই টাকা মা – বাবাকে দেব সংসারের খরচের জন্য। ছাত্র -ছাত্রীদের এই কথায় প্রমাণ হলো মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ শিশু পড়ুয়াদের মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ এর শিক্ষা দিয়ে তাদের প্রকৃত মানুষ করতে সচেষ্ট হয়েছেন পুঁথিগত শিক্ষা দানের পাশাপাশি।এই আনন্দ মেলা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীদের মুখে হাসি ফোটাতে রোটারী ক্লাব অব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীদের হাতে স্কুল ব্যাগ ও শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন।   ‌    ‌        এই উৎসব প্রসঙ্গে মঝল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ হাজরা বলেন, ” উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র তথা আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত সিরাজবাটি চক্রের অধীন সাত্তার টি প্রাথমিক বিদ্যালয়,নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্র আছে।আমরাই বেশ কয়েক বৎসর আগে এই বিদ্যালয়ে ছাত্র -ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবিকা ও গ্ৰামবাসীদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে ” আনন্দ মেলা ” উৎসবের সূচনা করেছিলাম। তারপর আমাদের অনুসরণ করে পাশ্ববর্তী বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাদের বিদ্যালয়ে এই মেলা করছে। এখানেই আমাদের সাফল্য। এই বিদ্যালয় শুধুমাত্র শিক্ষার অঙ্গ নয়।আমরা পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক হওয়ার শিক্ষা দিই। সামাজিক ভাবে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান, এলাকার মানুষের সুখে – দুঃখে পাশে থাকি। এই কাজ আমরা সারা বৎসর ধরে করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও নানান সমাজসেবা মূলক কাজ করতে চাই অবশ্যই এই বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রী, অভিভাবক – অভিভাবিকা ও গ্ৰামবাসীদের সহযোগিতায়। তিনি এও বলেন, এই বিদ্যালয় পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজের সাথে যুক্ত আছে।আমরা ছাত্র -ছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধ গঠনের শিক্ষা, সমাজসেবা কাজের মানসিকতা তৈরি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার শিক্ষা দিই। নানান খেলাধুলা শেখানো, সুস্থ সংস্কৃতি গঠনে নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন, নাটক শিখানো হয় এই বিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যেই এই বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীরা জেলায় ও রাজ্যে খেলাধুলায় ও সংস্কৃতিতে প্রশংসীত হয়েছে এবং হচ্ছে ও। তিনি আরও বলেন,গ্ৰামে ভাদ্র মাসে অধিকাংশ ছাত্র -ছাত্রীদের বাড়িতে মা মনসার রান্না ( যা অরন্ধন উৎসব নামে পরিচিত) হয়। সেই উৎসবে অনেক ছাত্র -ছাত্রী অন্য ছাত্র -ছাত্রীদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ পেয়ে থাকে। যারা নিমন্ত্রণ পায় না তারা খুবই মন কষ্টে থাকে। তাদের সেই মন কষ্ট নিরসনে আমরা বিদ্যালয়ে রান্না পূজার আয়োজন করে থাকি।এই উৎসবে বাড়িতে বাড়িতে যে যে রান্না হয়ে থাকে তার সবই বিদ্যালয়ে করা হয়। বিদ্যালয়ের এই উৎসবে ছাত্র -ছাত্রীরা যে যার বাড়ি থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী চাল, ডাল, তেল,নুন,আলু,আনাজ রান্নার অন্যান্য উপকরণ নিয়ে আসে। বিদ্যালয়ের এই উৎসবে গ্ৰামবাসীরা তাদের ক্ষেতের নানান আনাজ, অভিভাবক – অভিভাবিকাবৃন্দ দোকান – বাজার এর সামগ্ৰী দিয়ে সহযোগিতা করে। বিদ্যালয়ের রান্না পূজায় সকল ছাত্র -ছাত্রীরা আনন্দ সহকারে খাওয়া দাওয়া করে।            আনন্দ মেলা ও বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে অভিভাবকদের জন্য ছিল ফুচকা খাওয়া, হাঁড়ি ভাঙা, মিউজিক্যাল চেয়ার, ক্যুইজ প্রতিযোগিতা। ছাত্র -ছাত্রীদের ছিল যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। বিদ্যালয়ের শ্রেণীগত উল্লেখযোগ্য পারদর্শীতার জন্য সম্মাননা। এই বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীদের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বর্তমানে চিকিৎসক হওয়ার জন্য তাকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।          এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিরাজবাটি চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক দীপঙ্কর কোলে, আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়শ্রী বাগ,শিক্ষারত্ন পুরষ্কার প্রাপ্ত সোনামুই সাবালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অরুণ কুমার পাত্র সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।      মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সারাদিন ব্যাপী আনন্দ মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জনতার ঢল নেমেছিল।

Leave a Reply

error: Content is protected !!