Reported By : Masud Rana
১১ ই ফেব্রুয়ারি, শনিবার, মালদায় কৌটর গায়ে লেখা 'হেল্প ফর বিশাল' -ছেলে বেলার বন্ধুরা এক সাথে এক জোট হয়ে হাতে প্লাস্টিকের কৌট নিয়ে রাস্তায়। বিষয়টি জানতে চাইলে মন অবসন্ন হয়ে যাচ্ছে সকলের। খানিকক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন পথ চলতি মানুষজন। বন্ধুদের মানবিক চেহারা দেখে মুখ ফেরাতে পারছেন না কেউ।পাঁচ,দশ কুড়ি পঞ্চাশ যার যেমন সামর্থ্য কৌটোই ভরে দিচ্ছেন সকলে। সাথে দ্রুত আরোগ্যের কামনাও জানাচ্ছেন। বিশাল প্রামানিক বয়স আনুমানিক ২৪ বছর। বাড়ি মালদহের মানিকচক সিংহ পাড়া। মানিকচক শিক্ষা নিকেতন হাই স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর সংসারের দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। তার কারণ বিগত বছর দুয়েক আগে বিশালের বাবা গত হয়েছে। মানিকচক বাসস্ট্যান্ডে পি ডব্লিউ ডি জায়গায় বেড়া দেওয়া ভাঙাচোরা ছোট্ট একটি সেলুনের দোকান আছে তাদের। সেই দোকানের উপার্জন দিয়েই সংসার চালাতেন বিশালের বাবা গৌড় প্রামানিক ।তবে তিনি গত হওয়ার পর সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে বিশাল। বাড়িতে মা বোন আশি ঊর্ধ্ব ঠাকুমাও রয়েছে। কোন রকমে কষ্টসৃষ্টে দিন গুজরান করছিল বিশালের পরিবার। তবে আচমাই যেন পরিবারে বজ্রাঘাত। পিতৃ হারানোর বেদনা ভুলতে না ভুলতেই পরিবারে আবার যেন কালো মেঘ জমেছে। প্রতিবেশীদের কাছে হাসমুখ ছেলে বিশাল। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিল। সেরকম কোনো শারীরিক সমস্যাও ছিল না তবে কিছুদিন ধরে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় মালদায় একটি বেসরকারি প্যাথলজি সংস্থায়। সেখানে থেকে রিপোর্ট আসে তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। পরিবারের কাছে খবর পৌঁছতেই হতভম্ব হয়ে পরে সকলে। আত্মীয়-স্বজন পরিবার-পরিজন প্রতিবেশী সকলে পাশে দাঁড়ালে ব্যাঙ্গালোর নিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। তবে অর্থের যোগান হবে কোথা থেকে? দিনআনা দিনখাওয়া পরিবার, কোনরকমে গুজরান হয়। চিকিৎসার দরুন এত অর্থ পাবে কোথা থেকে? পরিস্থিতির কথা ভেবে প্রশাসনিক সহ বিভিন্ন বিশিষ্টদেরকাছে অর্থ সাহায্যের জন্য গেলেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি। সব আশার আলো যখন ব্যর্থ ঠিক সে সময় বিশালের বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নেয় তারা মানুষের কাছে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করবে। যেকোনো প্রকারে বন্ধুর প্রাণ বাঁচাতেই হবে। সেখান থেকেই শুরু।
এ প্রসঙ্গে বিশালের এক বন্ধু জানান আমরা বেশ কয়েকদিন ধরে অর্থ সংগ্রহ করছি তবে বিশালের চিকিৎসার জন্য কতটুকু আমরা অর্থ জোগাড় করতে পারব জানিনা। কারণ এই রোগের খরচ প্রচুর। তাও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশালের দীর্ঘায়ু কামনা করি, আবার সে যেন আমাদের সঙ্গেই হেসে খেলে জীবন যাপন করতে পারে।।
এ প্রসঙ্গে বিশালের মা জানান বিশালের বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের উপার্জন কারি বলতে বিশালি একা। আমাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো না। এখন ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এই পরিস্থিতিতে কোথায় থেকে এত অর্থ জোগাড় হবে জানিনা।ঘরের ছেলে ঘরে ফিরুক সুস্থ হয়ে এই দিকে চেয়ে বসে আছে বিশালের মা।
এ প্রসঙ্গে এক প্রতিবেশী জানান বিশালের পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়। তার অসুস্থতার কথা শুনে সকলে মিলে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার পরিবারের দিকে। সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক এই প্রার্থনা করছি আমরা।