প্রবন্ধ-নরেশ মণ্ডল – G Tv { Go Fast Go Together)
প্রবন্ধ-নরেশ মণ্ডল

প্রবন্ধ-নরেশ মণ্ডল

এই সময় আমাদের শিশুরা

আমরা বর্তমানে যে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তা অত্যন্ত অস্থির। এই সময়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব। অথচ আমাদের পথ চলতেই হয়। দাঁড়িয়ে থাকার কোনও অবস্থা নেই। সময় তো থেমে থাকে না, সুদিন দুর্দিন বলে। স্মরণাতীত কালে মনে পড়ে না এমন সময়ের কথা। সমাজ ভাবনার বাস্তবতা বড় নির্মম এবং কঠিনও বটে। প্রিয়জনের চলে যাওয়ার মতো অত্যন্ত দুঃখজনক ক্ষেত্রেও পাশে দাঁড়ানোও হয়ে ওঠেনি। দূরভাষই ভরসা। নৈকট্যের প্রয়োজনীয়তাকে আমরা কখনও অস্বীকার করতে পারি না। এর মধ্যে আত্মিক ভাব থাকে। তা তো দূরভাষে সম্ভব নয়। দূরত্ব বাড়ে। আমরা তো একটা কথা বলে থাকিআউট অব সাইট আউট অব মাইন্ড এই অতিমারী সময়কালে বড়দের জীবন প্রায় প্রতি মুহূর্তে অসমান পথে চলে। তখন সমাজকে স্বাভাবিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব যাদের উপর বর্তায় তারা যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। পারস্পরিক দোষারোপে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। স্বচ্ছতা মানবিকতার যখন বিশেষ প্রয়োজন সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা যেন আরও বেশি পীড়াদায়ক। মানুষ গৃহবন্দী অসহায় কর্মহীন। এর মধ্যে নিরন্তর এক অব্যবস্থার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খাদ্য সঙ্কট রোগের চিকিৎসা প্রতিনিয়ত মানুষকে আতঙ্কিত করে রাখছে। পরিবারের কয়েকজন আক্রান্ত হলে সমস্যা আরও গভীরে ঢুকে পড়ে।

   এই সময়ে শিশুদের অবস্থা খাঁচায় বন্দি পাখিদের মতো। বড়দের যতটা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় ছোটদের তা আরও শতগুণ বেশি হয়ে যেন চেপে বসে। স্কুল কতদিন বন্ধ সেটা মনে করতেও অনেকটা সময় নিতে হয়। সারাটা দিন চার দেওয়ালের মধ্যে নিত্যচলাফেরা। বাইরে বেরনো বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা বন্ধ। অবশ্য এখানে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো যে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে তা শিশু মনে বিকাশের পক্ষে সঠিক নয়। নিজেদের স্বাধীনভাবে চলার অধিকার নেই। মানে অবসর সময় খুব কম। খেলাধুলার যে গুরুত্ব আছে শরীর চর্চায় সেটা এখন প্রায় উঠে গেছে। বার্ষিক  স্পোর্টস একটা হয় বটে তবে সেখানে কজন পড়ুয়া উপস্থিত থাকে সন্দেহ। তারজন্য যে মেহনত করতে হয় সে রকম সুযোগ আজকের ছেলে-মেয়েরা পায় না। স্কুলের মাঠ এবং সেখানে খেলাধুলা করার সুযোগ কটা স্কুলে আছে।এর জন্য আলাদা মানসিকতার বিশেষ প্রয়োজন। এই চর্চার মাধ্যমে ভবিষ্যতের ভালো খেলোয়াড়ও পেতে পারে দেশ-রাজ্য। এরা বাংলার আদি খেলার নামও জানে না। লাট্টু,গুলি, সাত ঘুঁটি, গুলিডান্ডা বা ডাংগুলি, কানামাছি, উপেনটি বাইস্কোপ, এক্কা দোক্কা, এলাটিং বেলাটিং, কিৎ কিৎ, ইকির মিকির, কবাডি, চোর পুলিশ, আগডুম বাগডুম সহ আরও কত খেলা ছড়িয়ে আছে গ্রামবাংলায়। যা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রশ্ন করলে ছেলেমেয়েদের সময় কোথায় উত্তর আসবে অভিভাবকদের কাছ থেকে।

   ছোটদের চরিত্র গঠনে বই পড়ার বিরাট গুরুত্ব। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে স্কুল। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী বই নিয়ে পাঠাগার। আগে কিছু স্কুলে ছিল। এটা তো প্রত্যেকটা স্কুলে আবশ্যক হওয়া উচিত। পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি গল্প, জীবনী, জানা অজানার মতো নানা ধরনের বই থাকলে ছোটদের মধ্যে অন্য বইপড়ার আগ্রহ বাড়তো। নেট দুনিয়ায় ঢুকিয়ে দিলে শিশু মনের প্রকৃত বিকাশ ঘটতে পারে না। প্রকৃত মানুষ করার থেকে আমরা ক্রমশ এগিয়ে চলেছি যন্ত্র মানবের দিকে। পড়তে বসার মধ্যে একটা ধৈর্য লাগে। আজকাল ছোটদের মধ্যে এই ধৈর্যের অভাব লক্ষ্য করা যায়। বই নিজস্ব মনোজগৎ তৈরি করে। ভাবতে শেখায়। সাহিত্য পাঠ ভাষা শিক্ষায় সহায়ক ভূমিকা নেয়। চিন্তার জগতের প্রসার ঘটায়। এখন লেখার প্রবণতা কমে গেছে। ভাষার ভান্ডার না থাকায় চিঠি বা গদ্য লিখতে ছেলেমেয়েদের সমস্যায় পড়তে হয়। একটা অসম প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়া হয় শিশুকাল থেকে। বাবা মার না পারা বা না শেখার ইচ্ছেকে অনেকসময় চাপিয়ে দেওয়া হয়। এই দৌড়ে শিশু কতটা আগ্রহী তা দেখা বা বোঝার কোনও চেষ্টা আমাদের মধ্যে থাকে না। শুরু হয় দৌড় দৌড় দৌড়। এর ফলে মাঝ পথে কত প্রতিভা অকালে হারিয়ে যায়। পথভ্রষ্ট হয় তার খেয়াল আমরা রাখি না। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সঠিক পথ নিশানেকে চিহ্নিত করা ভীষণ জরুরি কর্তব্য বলে মনে হয়। তার মন গ্রহণ করার ক্ষমতা বিচার করে পথ চলতে সাহাজ্য করাই আমাদের এই সময়ে প্রধান কর্তব্য দায়িত্ব।

Leave a Reply

Translate »
Call Now Button